হযরত রাবেয়া বসরি (র.)
জন্ম ও পরিচয়
ইসলামের ইতিহাসে নারীদের মধ্যে যারা মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুুষটি অর্জন
করেছেন তাদের মধ্যে হযরত রাবেয়া বসরি (র.) অন্যতম। এ মহান তাপসী রমনী ৯৯
হিজরি মোতাবেক ৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের বসরা নগরীতে জন্ম গ্রহন করেন। তাই
তাঁকে বসরি বলা হয়। তার পিতা খুব দরিদ্র ছিলেন। যেদিন রাতে তিনি জন্ম গ্রহন
করেন ঐ দিন রাতে তার পিতার ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর মতো তৈলও ছিল না। তার পিতা ও
একজন মুওাকি (আল্লাহভীরু) ছিলেন। চার বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ ছিলেন। তাই
তার নাম রাখা হলো রাবেয়া (চতুর্থ)। বাল্য বয়সেই তার পিতা মাতা ইন্তিকাল
করেন। ফলে তাকে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।
ঐীতদাসী
হযরত রাবেয়া বসরি (র.)-এর পিতা মাতা ইন্তিকালের পর তার বড় বোনেরা জীবন ওজীবিকার অন্বেষনে অন্যতরো চলে যান। এ সময়ে বসরায় দুভির্খ দেখা দিলে তিনি
ঐীতদাসী হিসেবে বিঐীত হন। তার মনিব ছিল দুষ্ট প্রকৃতির। তাই তাকে দিয়ে অনেক
কাজ করাত। রাবেয়া বসরি দিনের বেলায় কঠোর পরিশ্রম করতেন। তার পরেও রাতের বেলায়
বিনিদ্র থেকে শুধু আল্লাহর ইবাদত করতেন।
একদিন রাতে তার মনিবের ঘুম ভেঙে গেল। সে জানালা দিয়ে দেখতে পেল. তার ঐীতদাসী
রাবেয়া একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করছে। উপর হতে একটি বাতি তার ঘর আলোকিত
করে রেখেছে। এক পযার্য়ের রাবেয়া মোনাজাত ধরে আল্লাহর দরবারে বললেন, হে
আল্লাহ তুমি আমাকে কোনো মানুষের অধীনে করে না রাখলে আমি সবর্খন শুধু তোমার
ইবাদত করতাম। রাবেয়ার মনিব এ অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেল এবং সকাল বেলা তাকে
পরিপূর্ণ স্বাধীন করে দিল। তিনি জীবনে বিবাহ করেন নি। কেবল আল্লাহর ইবাদতে
জীবন কাটিয়ে দেন।
আল্লাহর উপর আস্থা ও ইবাদত
তাপসী রাবেয়া বসরি (র.) আল্লাহর উপর বেশি নির্ভর শীল ছিলেন। তিনি জীর্নকুটিরে বসবাস করতেন। তবুও কোনো মানুষের সাহায্য গ্রহন করতেন না। হযরত রাবেয়া
বসরি অসুস্থ হলে আব্দুল ওয়াহিদ আমর ও প্রখ্যাত মুহাদ্দিস সুফিয়ান সাওরি তাকে
দেখতে যান। তখন সুফিয়ান সাওরি হযরত রাবেয়া বসরি কে বললেন, যদি আপনি মুখ খুলে
বলেন তাহলে আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দেবেন। রাবেয়া বললেন, হে আবু সুফিয়ান
আপনি কি জানেন না কার ইচ্ছায় আমার এ অসুস্থতা? যার ইচ্ছা তিনি কি আল্লাহ নন?
সুফিয়ান বললেন, হ্যাঁ! রাবেয়া বললেন, তাহলে কেন আমাকে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে
প্রার্থনা করতে বলছেন। মালিক ইবনে দিনার নামে এক লোক রাবেয়া বসরির পরিচিত
ছিলেন। তিনি একদা রাবেয়ার আর্থিক দুরবস্থা দেখে বললেন। আপনি বললে আমি আমার এক
ধনীবন্ধ থেকে আপনার জন্য সাহায্য আনতে পারি। রাবেয়া বললেন, হে মালিক। আমাকে
এবং আপনার বন্ধু কে কি আল্লাহই রিযিক দেন না? মালিক বলল,হ্যা! রাবেয়া বললেন,
আল্লাহ কি দরিদ্র কে তার দারিদ্র্যের কারনে ভুলে যাবেন? এবং ধনী দেরকে তাদের
ধনসম্পদ কারনে মনে রাখবেন? মালিক বলল, না। তখন রাবেয়া বললেন, আল্লাহ যেহেতু
আমার অবস্থা জানেন তখন তাকে আমার আবার স্বরন করানোর দরকার কি।
আল জাহিজ বলেন, রাবেয়ার কয়েকজন পরিচিত লোক তাকে বললেন, আমরা যদি আপনার আত্মীয়
স্বজনদের বলি তাহলে তারা আপনাকে একজন ঐীতদাস কিনে দেবেন। রাবেয়া বললেন, সত্য
কথা এইযে, যিনি সমস্ত পৃথিবীর মালিক তার কাছেই পার্থিক কিছু চাইতে আমার লজ্জা
হয়। অতএব যারা পৃথিবীর মালিক নয় তাদের কাছে কি করে আমি চাইতে পারি। ইবাদত
করার খেতরে হযরত রাবেয়া বসরি (র.)ছিলেন অতুলনীয়। তিনি যখনই সময় পেতেন তখনই
আল্লাহর ইবাদতে ব্যাস্ত হয়ে যেতেন। অধিকাংশ সময় তিনি দিনে রোজা রাখতেন আর
রাতে নফল নামাজ পড়তেন। তিনি সবর্দা আল্লাহর নিকট এ বলে প্রার্থনা করতেন যে,
হে প্রভু, আমাকে আমার নিজ কাজে (ইবাদত) ব্যাস্ত রাখুন। যাতে আমাকে কেউ আপনার
যিকির ( স্বরন) হতে বিমুখ করতে না পারে।
আধ্যাত্নিকতা
শুধু পুরুষরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করছে এমন নয়। অনেক নারীও আল্লাহর 'ওলি'(বন্ধু বা কাছের লোক) হতে পেরেছেন। আল্লাহ তাদের অনেক আধ্যাত্নিক খমতা
দিয়েছেন। হযরত রাবেয়া বসরি (র.)-এর ও অনেক আধ্যাত্নিক খমতা ছিল।
একদা হযরত রাবেয়া বসরি (র.) একটি হাড়িতে কিছু খাদ্য দ্রব্য রান্না করছিলেন।
তার একটি পেয়াজের দরকার পড়ে। কিন্তু তার ঘরে কোনো পেঁয়াজ ছিল না। তখন একটি
পাখি তার ঠোঁটে করে একটি পেঁয়াজ এনে তার কাছে ফেলে দেয়।
হযরত রাবেয়া বসরি (র.) একবার শস্য বুনছিলেন। পংগোপালেরা শস্য খেতের উপর এসে
পড়ছিল। তখন রাবেয়া প্রার্থনা করে বললেন 'হে আমার প্রভু এ হলো আমার জীবিকা। যদি
আপনি চান তাহলে আমি তা আপনার শত্রুদের বা বন্ধুদের দিয়ে দেব।' তখন পংগোপালেরা
উড়ে পালিয়ে গেল। ওলি হিসেবে তার থেকে আরও কারামত প্রকাশিত রয়েছে।
অনাড়ম্বর জীবনযাপন
হযরত রাবেয়া বসরি (র.) সদা সর্বদা সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। তিনি উচ্চাভিলাষীছিলেন না। তিনি সর্বদা নিজেকে তুচ্ছ মনে করতেন। আল্লাহর নিকট বেশি বেশি খমা
চাইতেন, সর্বদা আন্তরিক ভাবে আল্লাহর নিকট তাওবা (অনুশোচনা) করতেন। তিনি
বলতেন, মুখে মিথ্যা তাওবা করে কি লাভ যদি কাজে তা প্রমান পাওয়া না যায়। তিনি
সর্বদা আল্লাহর একজন শোকরগুজার(কৃতজ্ঞতা কারিনি) বান্দা ছিলেন। খেয়ে না খেয়ে,
দুঃখ কষ্টে,সর্বাবস্তায় তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বরুপ চলতেন।
ইন্তিকাল
অনেক শ্রম কষ্ট সাধ্য, ও আধ্যাত্নিকতাপূন্য জীবন যাপন করার পর আল্লাহর প্রিয়
এই নারী ১৮৫ হিজরি /৮০১ খ্রিষ্টাব্দে বসরায় ইন্তিকাল করেন। তাকে বসরায় দাফন
করা হয়। কথীত আছে যে, মুহাম্মদ ইবনে তুসী নামক এক লোক তার কবরে যায়। গিয়ে
বলে যে, হে রাবেয়া, আপনি গর্ব করতেন যে, উভয়ই জগতের বিনিময়েও আপনি আপনার মাথা
নত করবেন না। আপনি কি সেই উন্নত অবস্থা লাভ করছেন? জবাবে একটি আওয়াজ এলো
-'আমি যা চেয়েছিলাম তা আমি পেয়েছি। '
হযরত রাবেয়া বসরি (র.) -এর জীবন আধ্যাত্নিকতা, কষ্ট সহিষ্ণুতার ও সংযমের
আর্দশের পরিপূর্ণ। আমরা তার জীবনের আলোকে আমাদের জীবন গরবো। ইহকাল ও পরকালের
শান্তি পাব।
0 মন্তব্যসমূহ